
প্রকাশিত: Mon, May 6, 2024 1:11 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 8:32 PM
হেফাজতের সেই ভয়াল তাণ্ডবের স্মৃতি ঢাকাবাসীর ডিএনএতে মিশে আছে!
আরিফ জেবতিক : ঐতিহাসিক ৫ মে, যেদিন হেফাজতে ইসলামীর ব্যানারে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে মাদ্রাসা ছাত্রদের এনে ঢাকা দখল করে সরকার উচ্ছেদের গোপন পরিকল্পনা করুণভাবে ব্যর্থ হয়। শাসকদের প্রতি উপদেশ দিতে গিয়ে ১৫৩২ সালের ‘দ্যা প্রিন্স’ গ্রন্থে ম্যাকিয়াভ্যালির একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ওঃ রং নবঃঃবৎ ঃড় নব ভবধৎবফ ঃযধহ ঃড় নব ষড়াবফ, রভ ড়হব পধহহড়ঃ নব নড়ঃয. অর্থাৎ যদি নাগরিকদের কাছ থেকে ভালোবাসা আর সমীহ, দুটোই একসাথে পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে সমীহ পাওয়াটা ভালো।
বাস্তবতা হচ্ছে কেউ যদি ঢাকা শহর দখল করতে না পারে, তাহলে বিপ্লব অভ্যূত্থান এসবের মাধ্যমে কেউই এদেশে সরকার পরিবর্তন করতে পারবে না। মোঘল সাম্রাজ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য বিদ্রোহ বিপ্লব হয়েছে, কিন্তু মোঘল শাসকরা দিল্লির দখল হাতে রেখে দিতে পারায় তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। তথাকথিত ইসলামী বিপ্লব কী হতে পারে, সেটার ভিজ্যুয়াল স্যাম্পল ছিল ৫ মে। সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ ধরে আসা বিভিন্ন মাদ্রাসার ছোট ছোট মিছিলকে চাইলেই ঢাকার প্রবেশপথে ঠেকিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু সরকার সেটা করেনি। তারা সবাইকে শাপলা চত্ত্বরে জড়ো হতে দিয়েছে। এসব মিছিল ঢাকার আনাচে কানাচে দিয়ে গেছে। ঢাকার নিরীহ মধ্যবিত্ত তাঁদের ‘আই হেইট পলিটিক্স’ এর শান্তিপূর্ণ জীবনে এই নতুন উৎপাত দেখে ভয়ে আঁতকে উঠেছে। ওহ মাই গড, শিট জাস্ট গট রিয়েল। যে জুজুর ভয় এতদিন কল্পনায় দেখেছিল, সেই জুজু মিছিল করে বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এদের লিডার সেই লোক, যে বলে যে ক্লাস ফোরের পর মেয়েদের স্কুলে পড়ানো যাবে না!
এই যে তালেবানি রাষ্ট্রের ভিজ্যুয়াল ডেমনেস্ট্রেশন, তালেবানি রাষ্ট কী হইতে পারে তার স্যাম্পল সারা ঢাকা শহরে ঘুরে ঘুরে দেখানোÑ এইটা হেফাজত স্বার্থকভাবে করেছে সেদিন, আর তার বিপুল লাভ ঘরে তুলেছে আওয়ামী লীগ। দেশের মধ্যবিত্তের ‘ধর্ম সহনশীলতা’র একটা স্কেল আছে। সে জুম্মার নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, ঈদ করবেÑ কিন্তু তার নিজস্ব যাপনে ধর্মকে এর চাইতে বেশি স্পেস দিবে না। সে দাড়ি রাখবে না, সঞ্চয়পত্রের ইনটারেস্ট খাওয়া বন্ধ করবে না, তাঁর মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনার তো প্রশ্নই উঠে না।
এই মধ্যবিত্ত ঢাকাবাসী সেদিন ভয় পেয়েছিল। আমার মনে আছে, বিকেলের দিকে গোটা ঢাকা শহর ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর মাঝে খালেদা জিয়া দুপুরে বিবৃতি দিয়ে হেফাজতের আন্দোলনে সহায়তা করতে ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানানো ছিল বিএনপির একটা বড় রাজনৈতিক ভুল। তারপর রাত গভীর হলো। সাউন্ড গ্রেনেড মেরে হেফাজতের এতো বড় সমাবেশ অল্পসময়েই পণ্ড করে দিল সরকার। পরদিন ভোরে ঢাকার লোকজন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বাপরে বাপ। এই হেফাজতি তালেবান শাসন থেকে আমাদের তাহলে উদ্ধার করার একমাত্র সহায় হলেন শেখ হাসিনা। তাহলে শেখ হাসিনার জয় হোক। তিনি ইলেকশন করে আসুক কি গায়ের জোরে আসুক, এই হেফাজতি শাসন থেকে আমাদের বাঁচানোর একমাত্র উপায় তিনি।
তারপর থেকে গত ১১ বছর আর কোনো কথা নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেআগে গোটা বাংলাদেশকে বন্দি করে ফেললো বিরোধী জোট, কিন্তু ঢাকাকে বন্দি করতে পারলো না। সরকার যখন খড়গহস্ত হয়ে সেই আন্দোলন দমানো শুরু করল, তখন ঢাকার মধ্যবিত্ত অন্যদিকে চোখ সরিয়ে বসে থাকলো। কারণ হেফাজতের জুজুর ভয় তাদের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। শেখ হাসিনার এই দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার পেছনে হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাই অস্বীকার করার উপায় নেই। হেফাজতের সেই ভয়াল স্মৃতি ঢাকাবাসীর ডিএনএতে মিশে আছে। ম্যাকিয়াভেলির সেই সূত্রমতে তাঁরা যদি শেখ হাসিনাকে ভালোও না বাসে, তাঁরা হেফাজতি তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভয় থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাকি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয় না। লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
